জালে আটকা পড়া ঘড়িয়াল অবমুক্ত ও পরে মৃত্যু

ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীতে গত ৪ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার বিকেলে এক জেলের জালে ধরা পড়ে বিপন্ন প্রজাতির একটি ঘড়িয়াল। পরদিন শনিবার দুপুরে বন বিভাগের মাধ্যমে ঘড়িয়ালটিকে আবার পদ্মা নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে।

এলাকার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদীতে প্রাণীটি আটকা পড়ে এলাকার জেলে জাহাঙ্গীর শেখের জালে। এরপর সারা রাত জালে বন্দি অবস্থায় ঘড়িয়ালটিকে মাছ ধরা নৌকায় রেখে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে ঘড়িয়ালটি নিয়ে আসা হয় হাজিগঞ্জ বাজারে। সেই সময় ঘড়িয়ালটিকে দেখতে আগ্রহী মানুষেরা ঘিরে ধরে।

এলাকার বসবাসকারী মোশাররফ হোসেন সকাল পৌনে ১০টার দিকে একটি নছিমনে করে হাজীগঞ্জ বাজার থেকে ঘড়িয়ালটি ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডেপুটি কালেক্টর নেজারত (এনডিসি) মনদীপ ঘরাইয়ের কাছে নিয়ে আসেন। মনদীপ প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক উম্মে  সালমা তানজিয়ার আদেশে প্রাণীটি নদীতে অবমুক্ত করার জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, ঘড়িয়াল বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির মিঠা পানির কুমির বর্গের সরীসৃপ। এটি বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে মিঠা পানির এ জাতীয় ঘড়িয়াল রয়েছে ২০০টির মতো। আইইউসিএনের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সংকলন ‘রেড ডেটা বুক’-এর তালিকায় এর নাম রয়েছে।

ফরিদপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা নির্মল কুমার দত্তের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানায়, ঘড়িয়ালটির দৈর্ঘ্য ছিলো পাঁচ ফুট, আর প্রস্থ ছিলো দেড় ফুট। ঘড়িয়ালটির ওজন আনুমানিক ১৫ কেজি। শনিবার ৫ নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের শহরতলির ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে ঘড়িয়ালটিকে লোকজনের উপস্থিতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।[১]
বাঁচল না সেই ঘড়িয়াল ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের ভাজনডাঙ্গা খেয়াঘাট এলাকার পদ্মা নদীতে অবমুক্ত করা সেই বিরল প্রজাতির ঘড়িয়ালটি মারা  যায়। ওই দিন রাতে ঘড়িয়ালটি মরে পানিতে ভেসে ওঠে। স্থানীয় লোকজন মরা ঘড়িয়ালটি পানি থেকে উদ্ধার করেছে।

আরো পড়ুন:  সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ঘড়িয়ালদের বিনিময় করছে বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা

মো. আক্তারুজ্জামান, আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানান, গত শনিবার দুপুরে ছেড়ে দেওয়া ঘড়িয়ালটি রাতে পানিতে ভেসে উঠলে এলাকাবাসী সেটি উদ্ধার করে। ফরিদপুর সদর উপজেলার ফরেস্ট রেঞ্জার মো. মহিউদ্দিন জানান, ময়নাতদন্তের পর বন বিভাগ কার্যালয় এলাকায় ঘড়িয়ালটি পুঁতে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘড়িয়ালটির ময়নাতদন্তকারী পশু চিকিৎসক প্রভাত চন্দ্র সেন জানান, ময়নাতদন্তে ঘড়িয়ালের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে টানাহেঁচড়া করার কারণে ঘড়িয়ালটি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই পানিতে ছেড়ে দেওয়ার পর স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে ফেলে ঘড়িয়ালটি মারা গেছে।

উল্লেখ করা যায়, গত শনিবার ভোরে পদ্মা নদীতে এক জেলের জালে আটকা পড়ে ঘড়িয়ালটি। পরে সেটি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের জসীম ফোয়ারায় রাখা হয়। দুপুরে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের সহায়তায় পদ্মা নদীতে ঘড়িয়ালটি অবমুক্ত করা হয়েছিল।[২]

তথ্যসূত্র:

১. অফিস ফরিদপুর. “জেলের জালে বিপন্ন ঘড়িয়াল.” দৈনিক প্রথম আলো, 5 Nov. 2016, www.prothomalo.com/bangladesh/article/1014743.

২. প্রতিনিধি, “বাঁচল না সেই ঘড়িয়াল.” দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৭ নভেম্বর, ২০১৬, http://www.kalerkantho.com/home/printnews/426063/2016-11-07.

Leave a Comment

error: Content is protected !!