সুইডেন পুঁজিবাদ অর্থনীতি অনুসারী শিল্পোন্নত রাষ্ট্র

সুইডেন আয়তন (প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার), জনসংখ্যা (৮০ লক্ষাধিক) ও শিল্পোন্নতির স্তরের দিক থেকে উত্তর ইউরোপে প্রথম স্থানের অধিকারী।

৮০ শতাংশ জাতীয় আয় অর্জনকারী সুইডেনের উন্নত শিল্পই তার অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কৃষির স্থান সেখানে দ্বিতীয় স্তরে। বৃহৎ সুইডিশ একচেটিয়ারা পাশ্চাত্যের অন্যান্য সব একচেটিয়া সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

সুইডেন দেশের লৌহ আকরিকের প্রায় ৯০ শতাংশ, কাষ্ঠশিল্পজাত দ্রব্যাদির ৫০ শতাংশ এবং ইঞ্জিনিয়রিং সামগ্রীর ২৫ শতাংশের বেশি রপ্তানি করে থাকে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার প্রধান শরিক এবং সুইডেনের অর্থনীতির উপর এই শেষোক্ত দেশটির প্রভাব সমধিক।

লৌহ-আকরিক উৎপাদন সুইডেনের ভারী শিল্পের বৃহত্তম রপ্তানিকারী শাখা। মধ্য ও উত্তর সুইডেনের (কিরুনা ও জালিভারি) সমৃদ্ধ লৌহখনিগুলি থেকে প্রতি বছর উত্তোলিত ৩ কোটি টনের বেশি লৌহ-আকরিকের প্রায় পরোটুকুই প্রধানত পশ্চিম জার্মানি ও ব্রিটেনে রপ্তানি করা হয়।

মধ্য সুইডেনের লৌহ ও ইস্পাত কারখানাগুলি বার্ষিক অত্যুন্নত মানের প্রায় ৬০ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপাদন করে। স্থানীয় ও আমদানিকৃত কাঁচামালের সাহায্যে মধ্য সুইডেনে তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সীসা ও অন্যান্য লৌহেতর ধাতু উৎপন্ন হয়।

রাজধানী স্টকহোলম যার জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ হলো সুইডেনের বৃহত্তম ইঞ্জিনিয়রিং কেন্দ্র। ইলেকট্রো-টেকনিকাল সামগ্রী, মোটরগাড়ি ও সেন্ট্রিফিউজ শিল্পাদি স্টকহোলমে এবং বল-বিয়ারিং ও সমুদ্রগামী জাহাজনির্মাণ শিল্পগুলি গতেবর্গে কেন্দ্রিত। জাহাজনির্মাতা দেশ হিসাবে সুইডেন আজ জাপানের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। যুদ্ধের পর থেকেই এদেশে মোটরগাড়ি, ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ও জেটবিমানের উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে।

কাটাকাঠের পরিমাণের দিক থেকে সুইডেন আজ ফিনল্যাণ্ডের সমপর্যায়ে পৌছেছে এবং কাগজ ও কার্ডবোর্ড উৎপাদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর বিশ্বে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। মণ্ড ও কাগজ শিল্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত সালফিউরিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদিও সে উৎপাদন করে।

জলবিদ্যুৎ স্টেশনগুলি থেকেই দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এবং এর মোট বার্ষিক পরিমাণ ৯৫০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় পৌছেছে। সে তৈল ও অন্যান্য আকরিক জালানি আমদানি করে থাকে।

আরো পড়ুন:  আইসল্যান্ড মৎস্যশিল্প প্রধান গণতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র

সুইডেনের কৃষি ঘনীভূত এবং তার কৃষিজাত সামগ্রীর বাজার-চাহিদা অত্যধিক। মাখন, পনির, বেকন রপ্তানির সঙ্গে সঙ্গে সে প্রয়োজনীয় পরিমাণ শস্য, ময়দা ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী আমদানি করে।

তথ্যসূত্রঃ

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৯৪-১৯৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!