শসা বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো জনপ্রিয় ও ভেষজ ফল

ফল

শসা

বৈজ্ঞানিক নাম: Cucumis sativus L., Sp. Pl. ed. 1: 1012 (1753). সমনাম: Cucumis hardwickii Royle (1835), Cucumis sativus var. sikkimensis Hook. f. (1876), Cucumis setosus Cogn. (1881). ইংরেজি নাম: Garden Cucumber. স্থানীয় নাম: খিরা, শসা। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Tracheophytes. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ: Cucurbitales পরিবার:  Cucurbitaceae. গণ: Cucumis. প্রজাতি: Cucumis sativus

ভূমিকা: শসা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cucumis sativus) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পুর্ব জেলাতে জন্মে। এছাড়াও ভেষজ চিকিৎসায় কাজে লাগে।

শসা-এর বর্ণনা:

শসা বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ। এদের কান্ড ভূশায়ী, খররোমাবৃত। আকর্ষ সরু, সরল। পত্র প্রশস্ত তাম্বুলাকার ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১২-২০ সেমি, অতিরোমশ-কন্টকরোমী, ৫-৭ শিরাল, ৩-৫ করতলাকার খন্ডিত, খন্ড ত্রিকোণাকার, দন্তর, সূক্ষাগ্র, বৃন্ত ৮-২০ সেমি লম্বা, দৃঢ়, প্রলম্বিত, কন্টকরোমী উদ্ভিদ সহবাসী।

পুংপুষ্প: গুচ্ছাকার, মঞ্জরীদন্ড সরু, ৫-২০ মিমি লম্বা, বৃতিনল সরু ঘন্টাকার, খররোমাবৃত, ৮-১০ সেমি লম্বা, খন্ড তুরপুণাকার, বিস্তৃত, দলমন্ডল হলুদাভ সাদা, ২-৩ সেমি লম্বা, খন্ড দীর্ঘায়ত ভল্লাকার, সুক্ষ্মাগ্র, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড অত্যন্ত খাটো, পরাগধানী ৩-৪ মিমি লম্বা, যোজকের উপাঙ্গ ১ মিমি লম্বা।

স্ত্রী পুষ্প: একল বা গুচ্ছাকার, মঞ্জরীদন্ড দৃঢ়, ১-২ সেমি লম্বা, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরুপ, গর্ভাশয় ৩টি অমরা যুক্ত, প্রায়শ মূলকাকার, রোম, শক্ত, ঝাঝালো, গর্ভদন্ড খাটো।

ফল দীঘায়ত, অস্পষ্ট। ত্রিকোণাকার বা বেলনাকার, হলুদাভ-সবুজ, রোমশ বিহীন, কাঁচা ফল গুটিকাকার। বীজ ৭-১০ X ৩-৫ মিমি, সাদা, দীর্ঘায়ত, উভয় প্রান্ত সূক্ষাগ্র।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১৪ (Whitaker, 1930).

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

শসা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। উর্বর ও সুনিষ্কাশিত মাটিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। pH ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যবর্তী হওয়া প্রয়োজন। ফুল ও ফল ধরার মাস এপ্রিল থেকে অক্টোবর। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়।

শসা-এর বিস্তৃতি:

পৃথিবীর সব উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চাষাবাদ করা হয়। আদিনিবাস হিমালয়ের পাদদেশের পাহাড়ী ভূখন্ড ৩০০০ বছর পূর্ব থেকেই ভারতে চাষ করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করা হয়।

আরো পড়ুন:  লতা ডুমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মানো লতা

ভেষজ গুণ:

অপরিপক্ক ফল সালাদরূপে খাওয়া হয়। বড় ও পরিপক্ক ফল তরকারি রূপে রান্না করা হয়। বীজ শীতলতা দায়ী, টনিক ও মূত্র বর্ধক বৈশিষ্ট্যধারী।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

তৃষ্ণা নিবারণার্থে ইন্দোনেশিয়ায় দূরে গমনকারী পর্যটকবৃন্দ পাকা শসা সাথে নিয়ে পথ চলে। জেলি তৈরিতেও পাকা শসা ব্যবহার করা হয় । লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় কাচা ফলের তরকারি বাচ্চাদের আমাশয় নিবারণ করার জন্য খাওয়ানো হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) শসা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশে শসা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির চাষাবাদ প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৯-৩১০ আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: MIKHEIL

Leave a Comment

error: Content is protected !!