নাগবল্লী দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভেষজ গুণ সম্পন্ন ও টবে চাষযোগ্য আলংকারিক উদ্ভিদ

আলংকারিক উদ্ভিদের প্রজাতি

নাগবল্লী বা হলুদ মুসেন্ডা

বৈজ্ঞানিক নাম: Mussaenda glabra Vahl, Symb. Bot. 3: 38 (1790). সমনাম: Mussaenda andersonii Basu & Paul (1989). ইংরেজি নাম: wild mussaenda,  dhobi tree স্থানীয় নাম: বিচমালি, নাগাবলি, পত্র লেখা, রাওতাক, সাদাপাত, তেরি শিল-দাউরা।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Gentianales. পরিবার: Rubiaceae. গণ: Mussaenda  প্রজাতির নাম: Mussaenda glabra

ভূমিকা: নাগবল্লী বা হলুদ মুসেন্ডা (বৈজ্ঞানিক নামMussaenda glabra ইংরেজি: wild mussaenda,  dhobi tree) রুবিয়াসি পরিবারের,  ম্যুসেন্ডা গণের একটি এক প্রকারের লতান ঝোপ। এটি ভারতীয় প্রজাতি। ছোট আকৃতির এই গুল্মে কমলা ফুল ফোটে।

বর্ণনা:

নাগবল্লী আরোহী বা শায়িত গুল্ম। এই প্রজাতির বাকল বাদামী ও লেন্টিসেলযুক্ত। পাতা উপপত্রযুক্ত এবং বৃন্তক, উপপত্র ত্রিকোণাকার, দ্বিখন্ডিত, পত্রবৃন্ত দেড় সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। পত্রফলক আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার- বল্লমাকার ও দৈর্ঘ্য ৬-১৫ এবং প্রস্থ ১.৩-৬.০ সেমি। শীর্ষ দীর্ঘাঘ, গোড়া কীলকাকার থেকে অর্ধসূক্ষ্মাগ্র, মসৃণ বা নিম্নভাগে শিরার উপর স্বল্প রোমান পার্শ্বীয় শিরা ৫-৬ জোড়া। সাইম শীর্ষক, ঘন, অণুরোমশ।

বৃতি ঘন্টাকার, দন্তক ক্ষণস্থায়ী, গর্ভাশয় থেকে খাটো। পাপড়িসদৃশ খন্ডক আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার, সর্বোচ্চ। ৬.৫ × ৫.০ সেমি। পাপড়ি রোমশ, ২ সেমি পর্যন্ত লম্বা। খন্ডক দৈর্ঘ্যে প্রস্থে সমান। বেরী গোলাকার, মসৃণ, ঝরা । বৃতি ফলকের গোলাকার দাগবিশিষ্ট।[১]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ২২[২]

নাগবল্লী গুল্মের বংশ বিস্তার ও চাষাবাদ:

এরা রোদ বা আংশিক ছায়ায় তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। বীজ থেকে চারা জন্মে। পাহাড়ী ঢালে এই গাছ জন্মে। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় এই ফুল ফোটে। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ-সেপ্টেম্বর। কলম ও দাবা কলমে নতুন চারা জন্মে। এই প্রজাতি যেহেতু ঝোপাল তাই ছাঁটা অবশ্যয় প্রযোজনীয়।  

নাগবল্লী গুল্মের বিস্তৃতি:

আদি নিবাসের স্থান নির্দিষ্ট নয়। নাগবল্লী ভারত, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ায় দেশীয়করণ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং রাঙ্গামাটি জেলায় বিস্তৃত।

অর্থনৈতিক প্রযোজন ও ব্যবহার:

পত্র জন্ডিস এর ঔষধ এবং অতিরিক্ত রজ:স্রাবে ব্যবহৃত। পুষ্প কাশিরোধ, মূত্রবর্ধক এবং অতিরিক্ত রক্তস্রাব রোধী (Kirtikar et al., 1935). এই গাছের পাতা ও ফুল টব, বারান্দা, ব্যালকনি, সিঁড়ির শোভা বাড়ায়। এর কাঠ দিয়ে চামচ ও অন্যান্য জিনিস  তৈরি করা যায়।  

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০)  নাগাবলি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ধ্বংস এবং বনাঞ্চল উজারের কারনে সংকটাপন্ন এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কাযুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নাগাবলি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু উভয় পদ্ধতিতেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম আতিকুর রহমান এবং এস সি দাস (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১০৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

২. Kumar, V. and Subramaniam,, B. 1986 Chromosome Atlas of Flowering Plants of the Indian Subcontinent. Vol.1. Dicotyledons Botanical Survey of India, Calcutta. 464 pp.   

আরো পড়ুন:  বন সাবাইম এশিয়ার চিরহরিৎ বনে জন্মানো ভেষজ বৃক্ষ

Leave a Comment

error: Content is protected !!