তরমুজ বা খরমুজা উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ দেশসমূহের বাণিজ্যিক ফল

জনপ্রিয় ফল

তরমুজ

বৈজ্ঞানিক নাম: Citrullus lanatus ( Thunb.) Matsumura & Nakai, Cat. Sem. Spor. Hort. Bot. Univ. Imp. Tokyo 1920: 30 (1920). সমনাম: Cucurbita citrullus L. (1753), Momordica lanata Thunb. (1800), Citrullus vulgaris Schrad. (1936). ইংরেজি নাম: Watermelon. স্থানীয় নাম: তরমুজ। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants শ্রেণী: Eudicots উপশ্রেণি: Rosids বর্গ: Cucurbitales পরিবার: Cucurbitaceae উপপরিবার: Cucurbitoideae গণ: Citrullus প্রজাতি: Citrullus lanatus

ভূমিকা: তরমুজ বা তরমুজা বা খরমুজ বা খরমুজা (বৈজ্ঞানিক নাম: Citrullus lanatus) হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের সিট্রালাস গণের একটি বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ।

বিবরণ: এদের কান্ড কোণাকার, অতিরোমশ। আকর্ষ অণুরোমশ ২-খন্ডিত। এদের পাতা ডিম্বাকার, তাম্বুলাকার, ৮-২০ x ৫-১৫ সেমি, ত্রিকোণাকার, অমসৃণ, গভীর ভাবে ৩ খন্ডিত, খন্ড পক্ষবৎ খন্ডিত, ডিম্বাকার, দীর্ঘায়ত, ভল্লাকার বা রৈখিক, শীর্ষ খন্ড সূক্ষ্মাগ্র অন্যগুলি গোলাকার, বৃন্ত ৬-১২ সেমি লম্বা, ঘন রোমাবৃত। উদ্ভিদ সহবাসী।

পুংপুষ্প: মঞ্জরীদন্ড প্রলম্বিত, অতিরোমশ, বৃতিনল ঘন রোমশ, খন্ড সরু ভল্লাকার, ২-৩ মিমি লম্বা, দলমন্ডল ফ্যাকাশে হলুদ, ২.৫-৩.০ সেমি ব্যাস যুক্ত, অতিরোমশ, খন্ড ডিম্বাকৃতি দীর্ঘায়ত, স্থূলা, ১.০-১.৫ x ০.৫-০.৮ সেমি, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড মুক্ত, খাটো, পরাগধানী সংসক্ত, যোজক প্রসারিত অনুৎপাদিত।

স্ত্রীপুষ্প: মঞ্জরীদন্ড ২-৬ সেমি লম্বা, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরূপ, ডিম্বাশয় ঘন রোমাবৃত, গর্ভদন্ড ৪৫ মিমি, গর্ভমুন্ড ৩টি, বৃক্কাকার। ফল বৃহৎ, প্রায় ২৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, অর্ধগোলাকার বা উপবৃত্তাকার, মসৃণ, সবুজ বা চিত্রবিচিত্রিত, রসালো অংশ মিষ্টি, লাল বা হলুদ, বীজ কালো বা লাল বা অন্য রঙ যুক্ত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Matsubayashi, 1954).

চাষাবাদ ও আবাসস্থল: সূর্যকরোজ্জ্বল, শুষ্ক, সুনিষ্কাশিত, উর্বর দোআঁশ যুক্ত মাটি। তরমুজের বীজে বংশ বিস্তার ঘটে।

বিস্তৃতি: পৃথিবীর সব উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ দেশ, আদিনিবাস আফ্রিকা। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ৩০০০ বছর আগে থেকেই এর চাষাবাদ শুরু হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র বিশেষ করে চরাঞ্চলে এর ব্যাপক চাষ করা হয়।

আরো পড়ুন:  মমরডিকা হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের একটি গণ

তরমুজ বা খরমুজা-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার  ও গুরুত্ব:

গ্রীষ্মকালে তরমুজ ঠান্ডা ও সুমিষ্ট ফলরূপে খাওয়া হয়। ফলের রস পিপাসা নিবারণ করে এবং সংক্রামক জ্বর প্রতিরোধী। বীজ মূত্রথলি ও বৃক্কের সমস্যায় উপকারী। জাতিতাত্বিক ব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে ফলের রস লবন ও মরিচ যোগে পান করা হয়। দক্ষিণ চীনে শুষ্ক বীজ চিবিয়ে খাওয়া হয়।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তরমুজ প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে তরমুজ সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।[১]

পিপাসা ও হার্টকে সুস্থ রাখেতে: তরমুজ হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজের আছে ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন (carotene) ও পটাসিয়াম শরীরের কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তরমুজের পাতার রস আধাকাপ নিয়ে তার সাথে ২ বা ৩ টি জিরা গুঁড়া করে এবং একটু চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

প্রস্রাবের সমস্যার সমাধান: তরমুজের খোসা ছাড়ানো বীজ ৫-৬ গ্রাম নিয়ে বেটে, ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে প্রস্রাব স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও কিডনি পাথর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।

ত্বকের উপকার করে: মুখে মেচেতা থাকলে তরমুজ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। কারন তরমুজের ভিটামিন ‘এ’ থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে এসে সতেজ হবে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: তরমুজে প্রচুর ভিটামিট ‘এ’ আছে। এই ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখার জন্য উপকার। 

হাড় সুস্থ রাখে: মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে হাড়ে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। আর বয়সকালে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে। বাড়তি চাহিদা পূরণ না করতে পারলে হাত বা পায়ে ব্যথা হবে ও হাঁটাহাঁটিতে সমস্যা হবে। এই সময় নিয়মিত তরমুজ খেলে ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে ও হাড় মজবুত হবে।

আরো পড়ুন:  ইন্দ্রায়ন বা মাকাল ফল হচ্ছে আফ্রিকা ও এশিয়ার লতানো উদ্ভিদ

রক্তচাপ কমাতে: তরমুজে মধ্যে প্রচুর পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

অ্যাজমা প্রতিরোধে: নিয়মিত তরমুজ খেয়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধ অনেকটাই করা যেতে পারে। তরমুজে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগী তরমুজ খেয়ে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া তরমুজ ফুসফুস সুস্থ রাখতেও ভালো ভূমিকা রাখে।

অপুষ্টিতে: অপুষ্টিজনিত দুর্বলতা দূর করার জন্য কাঁচা তরমুজের শাঁস টুকরো টুকরো করে কেটে শুকিয়ে চূর্ণ করে শিশিতে মুখ ভালও করে আটকে রাখতে হবে। এই চূর্ণ প্রতিদিন ২ চা-চামচ নিয়ে এককাপ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে খেলে, অপুষ্টিজনিত দুর্বলতা কাটবে।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!