বাণীকুমার আধুনিক গানের বাঙালি গীতিকার ও শিল্পী

বাণীকুমার জন্মে ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর মাতুলালয় হাওড়া জেলার কানপুর গ্রামে। পিতৃদত্ত নাম বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। হাওড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজি সাম্মানিক স্নাতক।

তিনি হাওড়া জেলা বিদ্যালয়ে থেকে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। সেখানকার শিক্ষক কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগ্রহে কবিতাসহ লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাশ করেন। তাঁর পিতা ও পিতামহের সংস্কৃতে জ্ঞান থাকায় তিনিও সংস্কৃত বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং ‘কাব্যসরস্বতী’ উপাধি পান।

সংস্কৃত অহিমণ্ডল থেকে ‘কাব্যতীর্থ’ উপাধি পান। কাব্যে দীক্ষা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর রচিত কবিতাগুলো হলো চিত্রলেখা, বিদুষী, জাগৃহী, মরু-মায়া ইত্যাদি। এক বছর চাকরি করেন সরকারি টাকশালে। তারপরে কলকাতা বেতার কেন্দ্রের প্রায় সূচনা থেকে জড়িত হন।

১৯২৭ সালে ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেসে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কলকাতা বেতারকেন্দ্র স্থাপিত হয়। তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। সেই সময় বেতারকেন্দ্রের ভারতীয় অনুষ্ঠান বিভাগের অধিকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদারের আগ্রহে বেতারকেন্দ্র যোগদান করেন রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজকুমার মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র প্রমুখ শিল্পী। সেখানেই রাইটার স্টাফ আর্টিস্ট হয়ে বৈদ্যনাথ কাজে যোগদান করেন এবং ‘বাণীকুমার’ নামে তাঁর বেতার জীবন শুরু করেন।

অসংখ্য গান লিখেছেন তার বহুলাংশ অপ্রকাশিত। একসময়ে গান শিখেছিলেন বাণীকুমার, তবে গাইতেন না কখনও। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা কলকাতা বেতার কেন্দ্রের প্রবাদপ্রতিম ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ‘দেবদাস’,‘রূপলেখ’, ‘ভাগ্যচক্র ইত্যাদি চলচ্চিত্রেও গান লেখেন। গীতকাররূপে জড়িত ছিলেন নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – সন্তান, সপ্তর্ষি, গীতবল্লকী, কথা-কথালি, মহিষাসুরমর্দিনী, রায়বাঘিনী, হাওড়া হুগলীর ইতিহাস ইত্যাদি। বাণীকুমারের গীত-সংকলন ‘স্বরলিপিকা ১-২, গীতবল্লকী? ১-২। ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট তার প্রয়াণ ঘটে।

তথ্যসূত্র:

১. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা গান, প্যাপিরাস, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১ বৈশাখ ১৩৯৪, পৃষ্ঠা, ১৭৫-১৭৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!