বাংলাদেশ পুঁজিবাদ অনুসারী সাম্রাজ্যবাদ পীড়িত শোষণমূলক নয়া উপনিবেশিক রাষ্ট্র

বাংলাদেশ বা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা গণলোকতন্ত্রী বাংলাদেশ (ইংরেজি: People’s Republic of Bangladesh) পুঁজিবাদ অনুসারী এবং সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত দক্ষিণ এশিয়ার একটি নয়া উপনিবেশিক রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলার জনগণ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে গণযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটিকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এর অভ্যুদয় ঘটে।

বাংলাদেশ গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত। এদেশের পূর্বে মায়ানমার এবং উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের আয়তন সীমিত (১ লক্ষ ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার) এবং জনসংখ্যা ২২.৭ কোটি। এদের অধিকাংশই বাঙ্গালী এবং এরা সুপ্রাচীন সভ্যতার অধিকারী। দেশের অধিকাংশ মানুষই গ্রামবাসী। বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলির মধ্যে রাজধানী ঢাকা (জনসংখ্যা ২ কোটি) ও সাগরতীরের বন্দর-নগর চট্টগ্রাম (জনসংখ্যা ১ কোটি) উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৯৮১ সালে ছিলো ৮.৬ কোটি এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে গ্রামীণ জনসংখ্যার গড় ঘনত্ব ছিলো ৫০০ জন[১]।

বাংলাদেশের ইতিহাস

১৭০৪ সালে সুবা বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। এ ঘটনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এই যে, এর ফলে বিগত শত বর্ষে মুগল রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলা যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব লাভ করেছিল তার অবসান ঘটে। মুগল সেনাবাহিনী, সুবাদারি প্রতিষ্ঠানাদি, আমির-ওমরাহ, প্রশাসনিক শ্রেণি, বিপুল আমদানি রপ্তানি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল তার অবলুপ্তি ঘটে রাজধানী স্থানান্তরের ফলে। পূর্ব বাংলা পরিণত হয় মুগল সাম্রাজ্যের এক অবহেলিত প্রান্তিক অঞ্চলে। অপর দিকে, ঢাকার ধ্বংসস্তুপের উপর নতুন মহানগরী হিসেবে আবির্ভূত হয় মুর্শিদাবাদ। অতএব, ১৭০৪ পূর্ব বাংলার ইতিহাসে একটি অতি তাৎপর্যপূর্ণ তারিখ। স্বাধীন নবাবি যুগেরও গােড়াপত্তন হয় এই সনে, যখন দীউয়ান মুর্শিদকুলী খান সুবা বাংলার প্রকৃত স্বায়ত্তশাসকে পরিণত হন। সুতরাং বাংলাদেশের ইতিহাস বা পূর্ব বঙ্গের ইতিহাসের প্রারম্ভিক কাল হিসেবে ১৭০৪ একটি যুক্তিসঙ্গত মাইলফলক। আবার পূর্ব বঙ্গ সার্বভৌম নয়া উপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয় ১৯৭১ সালে।

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের ইতিহাস হচ্ছে পূর্ববঙ্গের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস

নবাবি আমল থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত এ দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রধান প্রধান ধারা-প্রবণতাগুলাে সনাক্তকরণ ও বিশ্লেষণ বাংলাদেশের ইতিহাসের মূল লক্ষ্য। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আঠারাে শতককে সমান দু’ভাগে ভাগ করা যায়—এর প্রথমার্ধে নবাবি শাসনের উত্থান ও বিকাশ এবং দ্বিতীয়ার্ধে নবাবি শাসনের পতন এবং বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা। গােটা উনিশ শতক ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের উন্মেষপর্ব। বিশ শতকের রাজনীতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিকগুলাে হচ্ছে বৃটিশবিরােধী আন্দোলন, শাসনতান্ত্রিক হস্তান্তর ও আপোষ, মুসলিম-হিন্দু ঘৃণা, সর্বভারতীয় বাঙালি বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং পরিশেষে বাংলা ও ভারত বিভাগ। বিভাগােত্তর যুগের রাজনীতির লক্ষণীয় দিক হচ্ছে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বদলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের শােচনীয় এবং চূড়ান্ত পরাজয় ছিল আসলে বাঙালি বিদ্বেষের আর কথিত মুসলিম জাতীয়তাবাদেরই পরাজয়। বাঙালি জাতীয় সত্তা সংরক্ষণের প্রতিজ্ঞা প্রথম প্রকাশ পায় ভাষা আন্দোলনে ও মুসলিম লীগের পরাজয়ে এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে।[২]

বাংলাদেশে ক্ষুদে মালিকানার বিকাশ

বাংলাদেশে ১৯৫০-এর দশকে জমিদারী বিলুপ্ত হয়ে কৃষক কিছু জমির মালিক হয়েছিল। এর ফলে কৃষকের সাময়িক লাভ হয়েছিল নিশ্চয়। কৃষক জমি পেলে সাময়িক লাভ হয়। কিন্তু কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন না হলে কী কৃষক মুক্ত হতে পারেন? জমিদারি প্রথা উচ্ছেদকেই উচ্চ রবে সমর্থন করলে, এবং অবশ্যই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি থেকে, তাহলে তাতে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে না। ফলে ১৯৭০-এর দশক থেকেই জমির মালিকানা নিয়ে গেছে বড় মালিকেরা, সব শহরেই রিয়েল এস্টেট প্রকল্প খুলেছে ঊর্ধ্বমুখী দালান তোলার। যে বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদের আস্ফালন বাংলাদেশে দেখা যায় তা মূলত এই ক্ষুদে মালিকদের বৃহৎ মালিকানা দখলের আস্ফালন এবং জনগণকে অবিরাম নিপীড়নের ইতিহাস।

বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম

          মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের গণযুদ্ধ প্রসঙ্গে

স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে একটি গণযুদ্ধে দেশটি স্বাধীন হয় যা বাংলাদেশের গণযুদ্ধ (ইংরেজি: Peoples War of Bangladesh) নামে পরিচিত। ১৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর নিকট পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় এক লক্ষ পাকিস্তানী সৈন্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটে। ভুটান, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যতীত অপরাপর অনেক রাষ্ট্র ডিসেম্বর ১৯৭১ এবং জানুয়ারি ১৯৭২ সময়ের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি প্রদান করে।[৩]

স্বাধীন বিকাশের কয়েকটি বছরের মধ্যে যুদ্ধের ফলে বিধস্ত অর্থনীতি পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্র উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিল। ১৯৭১ সালের পর বেসামরিক-সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে দেশে ব্যক্তিগত পুঁজিবাদী সম্পর্ক ও বিদেশী পুঁজি অনুপ্রবেশ জোরদার হয়েছে। তবে দেশের জাতীয় স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং শান্তি, গণতন্ত্র ও সামাজিক প্রগতির পথে তার উন্নতির উপরই বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন নির্ভরশীল।[৪]

বাংলাদেশের ভূগোল

বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা

পৃথিবীর বিখ্যাত নদী ব্যবস্থা গঙ্গা-পদ্মা, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা-বরাক সহ অসংখ্যক নদ-নদীর দেশ। এদেশে ১২০০-এর অধিক নদনদী বিরাজমান যাদের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ২৪০০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশ বেশ সুপরিচিত এবং তার মোট ভূভাগের ৮০ ভাগেরও বেশি ভূমি এসব নদ-নদী দ্বারা বাহিত পলল অবক্ষেপনের প্রতিদান। ফলে এদেশের শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক, রাজনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদিসহ বিবিধ কর্মকান্ড আবর্তিত হচ্ছে এসব নদ-নদীকে কেন্দ্র করে। তাই নদ-নদীই এক কথায় অস্তিত্ব ও প্রাণ। 

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের নদনদীর তালিকা

কোনো উৎস হতে, অর্থাৎ পার্বত্য ভূমি, হ্রদ, বৃষ্টিবহুল স্থান, বরফ স্তুপ ইত্যাদি থেকে নেমে আসা যে জলধারা সুদীর্ঘ খাতের মধ্যদিয়ে এঁকে বেঁকে নিয়ত প্রবাহমান, তাই নদী নামে পরিচিত। যে খাতের মধ্য দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা এবং উপত্যকার তলদেশ নদীগর্ভ নামে অভিহিত। অপেক্ষাকৃত ছোট নদী স্রোতস্বিনী, কোন একটি নদী অপর একটি নদীতে মিলিত হলে প্রথম নদীটিকে অপর নদীটির উপনদী এবং একটি নদী হতে অপর একটি নদীর উৎপত্তি/বিকাশ/সৃষ্টি হলে সৃষ্ট নদীটিকে মূল নদীর শাখা নদী বলে। উদাহরণস্বরূপ, মহানন্দা পদ্মা নদীর উপনদী আর গড়াই পদ্মার শাখা নদী। নদী যে স্থান থেকে উৎপত্তি বা সৃষ্টি হয় তাকে নদীর উৎস এবং যেখানে মিলিত হয় তাকে মোহনা বলে। একটি নদী ও তার উপনদীসমূহ একত্রে একটি নদী প্রণালী বা নদী ব্যবস্থা (ইংরেজি: River System) গঠন করে। 

নদী গঠনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়তন ও গতিবেগ সম্পন্ন একাধিক প্রবাহের মিলিত ধারা যা অন্তস্থ ভূমি ও শিলার ক্ষয় সাধনের মাধ্যমে খাত সৃষ্টি তথা এগিয়ে চলে থাকে। একটি উৎস আধার নদীর নিয়মিত প্রবাহ সচল রাখতে সদা সচেষ্ট থাকে। উদাহরণস্বরূপ গঙ্গোত্রী হিমবাহ গঙ্গা নদীর উৎস হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীই বার্ধক্য পর্যায়ে উপনীত হয়ে বঙ্গোপসাগরের পতিত হয়ে থাকে। তাছাড়া, উচ্চ ভূমি, ভূমির ঢাল ইত্যাদিও নদীর উৎপত্তিতে ভূমিকা রেখে থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী ছড়া, সর্পিল মৌসুমী খাড়ি, স্বল্প পানি সমেত কর্দমাক্ত খাল-বিল ও নালা এবং প্রধান প্রধান নদী ও এদের উপনদী, শাখানদী, সম্মিলিতভাবে বিশাল নদী ব্যবস্থার গোড়া পত্তনে ভূমিকা রাখছে। সুন্দরবন, বরিশাল, খুলনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে প্রচুর নদীনালা সত্যিকার অর্থে মনোরম জালের ন্যায় ছড়িয়ে আছে। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র এ নদ-নদীগুলো সমভাবে বন্টিত নয়।

বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্য

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণ (ইংরেজি: Wildlife of Bangladesh) বা বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য বলতে বোঝানো হয় প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশে আছে বা ছিল। এই ১২ হাজার প্রজাতির ভেতরে উদ্ভিদ আছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার এবং প্রাণী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার প্রজাতি।

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের বন্যপ্রাণ বা জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতা

উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ১৯৮৮ প্রজাতির শৈবাল, ২৭৫ প্রজাতির ফানজাই, ২৪৮ প্রজাতির মস জাতীয় উদ্ভিদ, ১৯৫ প্রজাতির ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ, ৭ প্রজাতির নগ্নবীজি এবং ৩ হাজার ৬১১ প্রজাতির গুপ্তবীজি (২৬৩৩ প্রজাতির দ্বি-বীজপত্রী এবং ৯৮৮ প্রজাতির একবীজপত্রী) উদ্ভিদ রয়েছে।

মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রায় ১৬০০ প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত। প্রাণী জগতের মধ্যে রয়েছে ৬৫৩ প্রজাতির মাছ যার মধ্যে ২৫১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এবং ৪০২ প্রজাতির লোনা পানির মাছ। রয়েছে ৭৯০ প্রজাতির পাখি, ৬৩ প্রজাতির উভচর, ১৭৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এছাড়াও রয়েছে ১৭৫ প্রজাতির প্রোটোজোয়া, ২৯ প্রজাতির পরিফেরা, ১০২ প্রজাতির নিডারিয়া, ১০ প্রজাতির টেনোফোরা, ৭৬ প্রজাতির রোটিফেরা, ১২৬ প্রজাতির প্লাটিহেলমেনথিস, ১৭৬ প্রজাতির নেমাটোড, ৪৭৯ প্রজাতির মোলাস্ক, ৪৬ প্রজাতির একিনোডার্মাটা এবং ৫০০০-এর অধিক আথ্রোপোডা।[৫]

বাংলাদেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি (ইংরেজি: Economy of Bangladesh) হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত কৃষিনির্ভর মিশ্র মুক্তবাজারী অর্থনীতি। এই দেশের অর্থনীতি খুব মজবুত নয়, তকমা দেয়া নাম হচ্ছে উন্নয়নশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই কৃষিজীবী ছিল ১৯৮০ সালের দিকে, এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুসারে ২০১৯ সালে এটি ৪৯ শতাংশ। বাংলাদেশে ধান ও পাট জন্মে এবং তার মৎস্যশিল্প যথেষ্ট উন্নত। এদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম পাট উৎপাদক। তদুপরি এখানে চা, তামাক, শাকসবজি এবং ফল-ফলাদিও জন্মে। পাটকল এবং কাপড়ের ও চিনির কারখানা থাকা সত্ত্বেও মোটের উপর দেশের দুর্বল অর্থনীতিতে কুটিরশিল্পের প্রাধান্য অব্যাহত।[৬]

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের অর্থনীতি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত কৃষিনির্ভর মিশ্র ও মুক্তবাজারী

বাংলাদেশ কৃষির উপর অধিক নির্ভরশীল একটি দেশ, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ খামারীদের মধ্যে মৌসুমী বেকারত্বের পাশাপাশি অনেক অঞ্চলে সাধারণত মানুষের নিম্নমানের জীবনযাত্রা অব্যাহত আছে। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শিল্পায়নের একটি নীতি গৃহীত হয়েছিল। পাকিস্তান প্রশাসনের ১৯৪৭-৭১ সময়কালে পাট, তুলা, গরুর চামড়া এবং অন্যান্য চামড়াজাত দেশীয় কাঁচামালগুলির উপর ভিত্তি করে শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। বেসরকারী খাতে স্বাধীন উদ্যোক্তার নীতিটি কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে গৃহীত হয়েছিল। আমদানির উপর নির্ভরতা এড়াতে শিল্প নীতিটি যত দ্রুত সম্ভব ভোক্তা পণ্যগুলির উৎপাদন বিকাশের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল।[৭]

১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশে মিশ্র অর্থনীতি গ্রহণ করা হয়। যদিও উন্নয়নশীল তকমা দেয়া হয়, কিন্তু দেশটি মূলত থেকে গেছে সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত। বাংলাদেশ ২০১৮-১৯ জুলাই জুন অর্থবছরে ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে এবং একই সময়ে ৫৫.৪৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। বাংলাদেশ সেই হিসেবে আমদানিকারী সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের উপরে নির্ভরশীল দেশ।

বাংলাদেশের সংস্কৃতি

বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি (ইংরেজি: Culture of Bangladesh) এবং বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনধারা (ইংরেজি: Cultural Life of Bangladeshi People) হচ্ছে হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে সংশ্লেষিত বঙ্গ অঞ্চলের মানুষের জীবনের ব্যবহারিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থান পতনের সাথে সাথে বিভিন্ন যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনধারা জানার জন্য আমাদেরকে জীবনধারণ প্রণালী সম্পর্কে জানতে হবে। কোন দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যখন স্বাধীনতা ও পরাধীনতার মতো বড় ওলটপালট ঘটে, তখন এর প্রভাব থেকে সে দেশের সমাজ ও সংস্কৃতি মুক্ত থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণের উত্থান ও পতনের সাথে এখানকার সংস্কৃতিরও রূপান্তর ঘটেছে।

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি হচ্ছে এতদঞ্চলের মানুষের জীবনের ব্যবহারিক সংস্কৃতি

নবাবি আমলে (১৭০৪-১৭৫৭) দেশে একটি নব্য অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। এই শ্রেণির সদস্য ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। নবাবি আমলের আমলাতন্ত্রে, ভূমি নিয়ন্ত্রণে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমান, বিশেষকরে স্থানীয় মুসলমানের অংশ ছিল নামেমাত্র। ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ফলে নতুন রাষ্ট্রকাঠামোতে নবাবি আভিজাত্যের অস্তিত্ব অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অতএব, ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থাধীনে নবাবি আভিজাত্যের পতন ঘটে। এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে। গড়ে উঠে নতুন সমাজব্যবস্থা।[৮]

তথ্যসূত্র:

১. ভ. প. মাক্সাকোভস্কি, অনুবাদ: সুবীর মজুমদার: উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৯৯।
২. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশের ইতিহাস ১৭০৪-১৯৭১, রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট, প্রথম খণ্ড, মিত্র ঘোষ এন্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ডিসেম্বর ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ১-৩
৩. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২১৫-২১৭।
৪. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, পূর্বোক্ত।
৫. বন অধিদপ্তর, তথ্যকণিকা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৪
৬. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১২৮-১২৯।
৭. সম্পাদকীয় বোর্ড, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা,
৮. সিরাজুল ইসলাম, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৩।

আরো পড়ুন:  আফগানিস্তান সাম্রাজ্যবাদ পীড়িত পুঁজিবাদ অনুসারী শোষণমূলক রাষ্ট্র

Leave a Comment

error: Content is protected !!